নিজস্ব প্রতিবেদক : নিরুত্তাপ ছাত্রলীগ। প্রায় দুই বছরেরও অধিক সময় কমিটি নেই সংগঠনটির। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের শাস্তি হিসেবে বারবার ঝড় গেছে সংগঠনটির উপর। বর্তমানে কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কমিটি দিয়েই চলছে সিলেটে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। গেলো সংসদ নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও সাংগঠনিক ভুমিকা রাখতে পারেনি সংগঠনটি। কমিটি না থাকায় সংগঠনটির ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও পালিত হয়েছে অনেকটা নিরুত্তাপভাবে।
সিলেটের ধারবাহিকতায় সংগঠনটির কেন্দ্রেও ঘটে ছন্দ-পতন। বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত হন দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ফলে ভেঙ্গে পড়ে চেইন অব কমান্ড। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নতুন করে দায়িত্বে আসেন একজন সভাপতি এবং একজন সাধারণ সম্পাদক। শনিবার ছাত্রলীগের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ভারমুক্ত করে দেন। ভারমুক্ত করার পর নতুন করে আশার অলো দেখতে পায় সংগঠনের সারাদেশের নেতাকর্মীরা।
এর প্রভাব পড়ে সিলেটেও। দীর্ঘদিন ছাত্রলীগ করে আসা কর্মীদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। সিলেটের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও একইভাবে হয়েছেন প্রানোদীপ্ত। প্রায় ২ বছরের অধিককাল ধরে কমিটি নেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সিলেট জেলা শাখার। ফলে দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় সংগঠনের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন কর্মীরা। কেউ কেউ হতাশ হয়ে দেশ ছেড়ে বেছে নিচ্ছেন প্রবাসযাত্রার পথও। অনেকেই যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন পেশায়।
তবে, ভারমুক্ত পরবর্তী দলের কেন্দ্রীয় সূত্রের দাবি-শুধু সিলেটে নয়, সারাদেশে সংগঠনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত মাঠে নামছে কেন্দ্র। এরই ধারাবাহিকতায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি এবং অগোছালো অঞ্চলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজে নামা হবে। চলতি মাস থেকেই এই কার্যক্রম চলবে এবং জানুয়ারির শেষের দিকে।
ছাত্রলীগের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বায়ান্নর ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, সাতান্নর শিক্ষক ধর্মঘট, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। স্বাধীন বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সংগ্রামী ভূমিকা বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য।
জানা গেছে, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয় ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। শাহরিয়ার আলম সামাদকে সভাপতি ও এম. রায়হান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে সে সময় গঠন করা হয় ১০ সদস্যের আংশিক কমিটি। পরের বছর ২০১৫ সালের ৪ ডিসেম্বর আরো ১৩১ সদস্য যোগ করে ১৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন পায়। এই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর থেকেই প্রকাশ্যে দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে পরে জেলা ছাত্রলীগ। ঘটে সংঘর্ষ এবং একাধিক উত্তেজনাকর ঘটনা। যার ফলে মাত্র চার মাসের মাথায় ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্র।
কমিটি স্থগিত হওয়ার পর বেশকিছু দিন শান্ত ছিল জেলা ছাত্রলীগ। তাই প্রায় ৯ মাস পর ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর কমিটির ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের সাথে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সম্মেলন আয়োজনের জন্য তারিখ নির্ধারণে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু সম্মেলন করতে ব্যর্থ হয় সামাদ-রায়হান নেতৃত্বাধীন কমিটি। এরপর সংগঠন বিরোধী কয়েকটি কার্যকলাপে জেলা ছাত্রলীগের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় বিব্রত হয় কেন্দ্রীয় সংসদ।
২০১৭ সালের অক্টোবরে ছাত্রলীগ কর্মী ওমর মিয়াদ হত্যা মামলায় জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এম. রায়হান চৌধুরী প্রধান আসামী হন। এর জেরে ওই বছরের ১৮ অক্টোবর কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন।
একইসাথে নতুন কমিটি গঠনের জন্য ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পদে জীববৃত্তান্ত আহবান করেন তারা। সে সময় সিলেট জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৃজন ঘোষের কাছে সভাপতি পদে ৬০ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৮০টিসহ তিন শতাধিক জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা পড়ে। কিন্তু সিভি নিয়েও কমিটি করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
এর ফলে ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে গত দেড় বছর কমিটি ছাড়াই চলছে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ। আর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ছাড়াই অতিবাহিত হয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।
প্রত্যেকটি নির্বাচনেই ছাত্রলীগের কমিটি না থাকার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে বলে বিভিন্ন সময় উল্লেখ করেছেন সাবেক ছাত্রনেতারা।সাবেক ছাত্রনেতারা বলছেন, জেলা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্রমেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। তাদেরকে ঘিরে ধরছে হতাশা। ফলে রাজনীতির পথ ছেড়ে অন্য পথেই হাঁটছেন তারা।